চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার
আপনি যদি কাঁচা আমলকির ব্যবহার ও কাঁচা আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেল টি শুধু আপনার জন্য । আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করবো কাঁচা আমলকি সম্পর্কে যাবতীয় সব অজানা তথ্য যা আপনারা জানলে অনেক উপকৃত হবেন । আমাদের জীবনে সুস্থভাবে জীবন যাপনের জন্য আমলকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ । আমলকির উপকারিতা আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে চলতে অনেক বেশি সাহায্য করবে ।
আমলকির জাদুকরি সব উপকারিতা আপনার চুলের বাড়তি যত্ন নেয়ার জন্য অনেক গুরুত্ব রাখে। এটা শুধু ছোট্ট একটি ফল না এর মধ্যে রয়েছে অনেক রকমের উপকারিতা যা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সুন্দর করে তুলবে । আমলকি দিয়ে চুলের যত্ন নিলে খুব সহজেই পাবেন সুস্থ ও প্রাণবন্ত চুল।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার
- চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার
- আমলকি ফলের ব্যবহার
- আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- শুকনা আমলকির ব্যবহার
- চুলে আমলকির রস ব্যবহারের নিয়ম
- নতুন চুল গজাতে আমলকির ব্যবহার
- যেসব রোগের জন্য আমলকি উপকারি
- আমলকির ক্ষতিকর দিক গুলো
- লেখকের শেষ মন্তব্য
চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার
চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার চুলের জন্য অনেক উপকারি । এটি চুলের
বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে,চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে, চুল বাড়াতে সাহায্য
করে এবং চুলকে অনেক ঘন করে । আরও বিভিন্ন রকমের উপকারিতা আছে আমলকি চুলকে
নরম ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং চুল পাকা কমাতে সাহায্য
করে।
চুলে কাঁচা আমলকি কিভাবে ব্যবহার করা যায় ,সাধারনত কাঁচা আমলকি নিয়ে
তা বেটে অথবা ব্লেন্ডারের মাধ্যমে আমলকির রস পরিমাণ মত বের করে নিতে
হবে। এই রস আপনাদের মাথার ত্বক এবং চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করবেন । ১৫ থেকে
২০মিনিট রেখে দেয়ার পর তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে আপনি
নিয়মিত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চুলের সঠিক যত্ন নিতে পারেন যা আপনার
চুলকে দীর্ঘস্থায়ী এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে।
আমলকি ফল এর ব্যবহার
আমলকি একটি উপকারি ফল, যা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায় ।এটি সরাসরি খাওয়া
যায় , আমলকির ফল কাঁচা চিবিয়ে তার রস খাওয়া যায় ,আচার করে খাওয়া যায় ,মোরব্বা
তৈরি করে খাওয়া যায় । বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, যেমন
আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে আমলকির ব্যবহার অনেক
রয়েছে। আমলকি সাধারণত ভিটামিন সি । আমলকি নিয়মিত খাওয়ার
ফলে খাবারের রুচি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত আমলকি খাওয়া প্রয়োজন
। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সবার নিয়মিত আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
উচিত। তবে আমলকি সারা বছর ধরে পাওয়া সম্ভব না। তবে যখন আমলকি
মৌসুমে পাওয়া যায় তখন আমলকির পুষ্টি গ্রহণের হাতছাড়া করা যাবে
না। জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমলকি ফলের
পুষ্টির গুরুত্ব অপরসীম।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি একটি পুষ্টিকর ফল। আমলকি ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি
উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, হজম শক্তি
ভালো হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারি
একটা ফল । আমলকি ডায়াবেটিস সাথে আরো অন্যান্য রোগের ঝুঁকি
কমাতে সাহায্য করে। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় সহজে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আমলকি সাধারণ টক জাতীয় ফল এবং তেতো এইজন্য মুখের রুচি বাড়ানোর জন্য
উপযোগী একটা ফল। আমলকির রস খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপযোগী । আমলকি
সাধারণত নিয়মিত খাওয়ার ফলে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য,
বদহজম ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমলকি
অনেক উপকারি একটা ফল। যেমনঃ আমলকি চুলের গোড়া মজবুত করতে
সাহায্য করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আমলকি
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এ স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে। আমলকি
চোখের জন্য অনেক উপকারী এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে চোখের দৃষ্টি
শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শুকনা আমলকির ব্যবহার
শুকনো আমলকিকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায় যেমন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে ,চুলের বিভিন্ন উপয়ায়ে যত্ন নিতে,এবং ত্বকের যত্নে আমলকীর
গুরুত্ব অপরসীম। এটি সরাসরি খাওয়া যায় যার ফলে এটি দাঁতের যত্নে অনেক
উপকারি একটি ফল । আরও বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে শুকনা আমলকি গুড়ো
করে বিভিন্ন খাবারের মধ্যে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । আমার আমলকির তেল
তৈরি করে চুলে ব্যবহার করা যায় ।
শুকনা আমলকি সরাসরি খাওয়া যায় আবার পানির মধ্যে মিশিয়ে মানে গরম পানিতে ভিজিয়ে
রেখে সেই পানি পান করা যায় । আমলকি নিয়মিত খাওয়ার ফলে হজমশক্তি বারাতে সাহায্য
করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য অনেক উপযোগী। শুকনা আমলকি গুঁড়া
করে তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । চুল
পড়া বন্ধ করে ,চুলকে নরম রাখে , চুলের খুকশি দূর করে, চুল পড়া বন্ধ
করে এবং চুলের গোঁড়া মজবুত করে । শুকনা আমলকি ত্বকের জন্য অনেক বেশি
উপকারি ত্বকে কিভাবে শুকনা আমলকি ব্যবহার করা যায়, প্রথমে শুকনা আমলকি গুড়ো
করে মধু বা দই এর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বককে মসৃণ করে।
চুলে আমলকির রস ব্যবহারের নিয়ম
চুলে আমলকির রস ব্যবহার করার জন্য প্রথমত আমলকিকে ভালোভাবে থেঁতে করে নিতে
হবে। থেঁতে করার পর আমলকি থেকে যে রস বের হবে সেই রস মাথায় চুলের গোরায়
ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। এর পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ভালোভাবে শ্যাম্পু
করে ধুয়ে ফেলতে হবে । চুলে আমলকির রস নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে, চুলের গোঁড়া
মজবুত করতে সাহায্য করে ,চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে কালো ও ঘন করতে
সাহায্য করে এবং চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে ।
আমলকির রস একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন
সমস্যার সমাধান করে। সুধু তাই নই চুলের যেকোনো সমস্যা তে আমলকির রস অনেক বেশি
উপকারি । চুলের সঠিক ব্যাবহার ও যত্ন নিতে ভিটামিন ,মিনারেল সমৃদ্ধ আমলকির
রস আপনার নিয়মিত ব্যাবহার করতে পারেন । রুক্ষ -শুষ্ক চুলের পুষ্টির জন্য বা
চুলের গ্রোথের জন্য আমলকির রস আপনি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন । অবশ্যই
ভালোভাবে মাথায় রাখবেন সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে না । এই টা উপকারের
থেকে ক্ষতি বেশি হতে পারে চুলের জন্য অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না । তাই সপ্তাহে
২ থেকে ৩ দিন নিয়মিত ব্যাবহার করতে পারেন ।
নতুন চুল গজাতে আমলকির ব্যবহার
নতুন চুল গজাতে আমলকি অনেক উপকারি একটা ফল । ভিটামিন সি থাকার কারনে
আমলকি ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে । আমলকিতে থাকা আরও
পুষ্টিগুণ উপাদান থাকায় নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সাহায্য
করে এবং নতুন চুল উঠে ।আরও বিভিন্ন উপায়ে আমলকিকে ব্যাবহার করে উপকারিতা পাওয়া
যায় যেমন,আমলকি দিয়ে তেল তৈরি করে বা আমলকির ভেজানো পানি নিয়মিত ব্যবহার করলে
নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে ।
আমলকির তেল তৈরি করবেন কিভাবে আপনারা হয়তো অনেকেই সঠিক জানেন না । তাহলে চলুন
জেনে নেওয়া যাক আমলকির তেল তৈরি করার প্রসেস প্রথমে কিছু পরিমান আমলকি নিবেন,
তার পর আমলকি গুলা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে পাটার মাধ্যমে বা ব্লেন্ডারের
মাধ্যমে আমলকিকে থেঁতো করে একটা পরিষ্কার পাত্রে রাখবেন। নারিকেলের তেল
কড়ই তে দিয়ে তেল কে গরম করে নিতে হবে। তার পর থেঁতো করা আমলকি তেল এর মধ্যে
ভালোভাবে জাল করতে হবে । তার সাথে মেথি ব্যাবহার করতে পারেন এইভাবে কিছুক্ষণ
জাল দেয়ার পর দেখবেন আমলকির গুলা পুরে লালচে কালার হয়ে যাবে । তার পর তেলকে
ছাঁকনির মাধমে ছেঁকে নিবেন । আমলকির তেল তৈরি হয়ে গেলে এই বার একটা পরিষ্কার
তেল এর পাত্রে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারবেন । এই তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই আপনার চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সাহায্য করে এবং নতুন
চুল গজায় ।
যেসব রোগের জন্য আমলকি উপকারি
আমলকি বিভিন্ন রোগ কমানোর জন্য উপকারি একটি ফল । সরদি -কাশি কমানোর জন্য
আমলকির ব্যাবহার গুরুত্ব রাখে । কোষ্ঠকাঠিন্য ,হজমের সমস্যা দূর করতে
আমলকির উপকারিতা রয়েছে । ত্বক ও চুলকে ভালো রাখতে আমলকির অনেক উপকারি।
আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে। আমলকি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের গোঁড়া মজবুত করে এবং
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
আমলকি ফল বমি কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে । আমলকি নিয়মিত খায়ার ফলে মুখের
রুচি ও স্বাদ বারায়। আমলকি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারি ফল
কারন, এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । আমলকি
ত্বককে উজ্জল ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে এবং মুখের ব্রণ কমাতেও সাহায্য
করে । আমলকি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে।
আমলকির ক্ষতিকর দিক গুলো
আমলকির যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। সাধারন অতিরিক্ত পরিমানে কোন কিছুই ব্যবহার করা ঠিক না বা খাওয়া ঠিক না । অতিরিক্ত পরিমানে আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরের কিছু শারীরিক সমস্যা থাকার কারনে ক্ষতিকর হতে পারে । যেমন , যাদের এসিডিটি বা হজমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার কারনে ক্ষতি হতে পারে । আরও ক্ষেত্রে আমলকি বেশি খাওয়ার ফলে এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
পানিশূন্যতার অভাব দেখা দিতে পারে তাই যাদের শরীরের পানির পরিমান কম আছে তারা অতিরিক্ত
আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন । যাদের শরীরের রক্তচাপ কমার সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পরিমানে আমলকি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে । অনেকের শরীরে এলার্জির মতো সমস্যা আছে যেমন, ত্বক চুলকানো বা শরীরের মধ্যে ফুসরি উঠার মতো সমস্যা তাদের বেশি পরিমানে আমলকি খাওয়া একদম ঠিক হবে না । হার্টের সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তার পর আমলকি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন ।
লেখকের শেষ মন্তব্য
উপরে থাকা এই আর্টিকেল থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম । চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার , কাঁচা আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা ,আমলকির ক্ষতিকর দিক এই আর্টিকেলের মধ্যে আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে । আপনি যদি আমলকি সম্পর্কে সব সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হন তাহলে এই আর্টিকেল টি অনুসরন করে আমলকির সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন ।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ । প্রিয় পাঠক উপরে থাকা আর্টিকেল পরে আপনারা আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত সব জানতে পেরেছেন । আর্টিকেলটি পরে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে বা উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন । তাহলে তারাও আর্টিকেলটি পড়ে বিস্তারিত সব সঠিক তথ্য জানতে পারবে । আপনি যদি এইরকম নতুন নতুন নিয়মিত আর্টিকেল পেতে চান তাহলে www.zevonta.com এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন । এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।
জেভন্টার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url